ব্যক্তির চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই। একটি চাহিদা পূরণ হওয়ার সাথে সাথেই নতুন একটি চাহিদার সৃষ্টি হয়, এবং মানুষ তা পূরণ করতে বিভিন্ন আচরণ করে। মানুষের প্রতিটি আচরণের পিছনে থাকে কোনো না কোনো অভাববোধ বা চাহিদা, আর এই অভাববোধ দূর করার আকাঙ্ক্ষাই তাকে কর্মপ্রেরণা দেয়। অর্থাৎ, অভাববোধ বা চাহিদা পূরণের জন্য ব্যক্তি যে আচরণ করে এবং উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে এগিয়ে যায়, তাকেই প্রেষণা বা Motivation বলে।
প্রেষণার শব্দগত অর্থ
“প্রেষণা” শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ “Motivation“। এটি ল্যাটিন শব্দ “Movere” থেকে এসেছে, যার অর্থ “To Move” বা “এগিয়ে যাওয়া”। অর্থাৎ, প্রেষণার আক্ষরিক অর্থ হলো—অভাববোধ বা চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া।
প্রেষণার সংজ্ঞা (Definition of Motivation)
- মনোবিদ সুইফট (Swift)-এর মতে:“যে পরিবর্তনশীল মানসিক প্রক্রিয়া ব্যক্তির নানাবিধ চাহিদা পূরণের জন্য তার আচরণধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাইই হলো প্রেষণা।”
ইংরেজিতে:
“Motivation is a dynamic process initiating and directing behaviour, continuous but fluctuating in intensity, and aimed at the satisfaction of the individual’s needs.” - মনোবিদ ক্রাইডার (Cryder)-এর মতে:“যে প্রক্রিয়া ব্যক্তির আগ্রহ, আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজনকে সক্রিয় করে তোলে এবং তাকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের দিকে পরিচালিত করে, তাকে প্রেষণা বলে।”
প্রেষণা চক্র (Motivation Cycle)
প্রেষণা চারটি স্তরের মধ্য দিয়ে চক্রাকারে আবর্তিত হয় এবং লক্ষ্য পূরণের দিকে ব্যক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই স্তরগুলি হলো:
- অভাববোধ বা চাহিদা (Need)
- তাড়না (Drive)
- সহায়ক বা যান্ত্রিক আচরণ (Instrumental Behaviour)
- লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য (Goal)
প্রেষণার শ্রেণীবিভাগ (Types of Motivation)
প্রেষণাকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
- জৈবিক প্রেষণা (Physiological Motivation):
- ব্যক্তির শারীরিক বা জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য সৃষ্ট প্রেষণা।
- উদাহরণ: ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিদ্রা, মাতৃত্ব ইত্যাদি।
- ব্যক্তিগত প্রেষণা (Personal Motivation):
- ব্যক্তির মানসিক, আবেগিক বা আত্মসচেতনতাজনিত চাহিদা।
- উদাহরণ: আত্মমর্যাদা, মূল্যবোধ, মনোভাব ইত্যাদি।
- সামাজিক প্রেষণা (Social Motivation):
- সমাজে বসবাসের কারণে সৃষ্ট চাহিদা।
- উদাহরণ: নিরাপত্তা, ভালোবাসা, খ্যাতি, স্বীকৃতি ইত্যাদি।
প্রেষণার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Motivation)
- অভ্যন্তরীণ ও ব্যক্তিগত: প্রেষণা ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ চাহিদা থেকে উদ্ভূত হয়।
- ব্যক্তিগত পার্থক্য: ব্যক্তি অনুযায়ী প্রেষণার ধরন ও মাত্রা ভিন্ন হয়।
- সময়ানুগ পরিবর্তনশীলতা: চাহিদা পূরণ হলে প্রেষণার তীব্রতা কমে, নতুন চাহিদা সৃষ্টি হয়।
- আচরণের পরিবর্তন: প্রেষণা ব্যক্তির আচরণকে লক্ষ্যমুখী করে তোলে।
- পরিবর্তনশীল প্রকৃতি: চাহিদা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রেষণার ধরন বদলায়।
- জীবনের ভারসাম্য রক্ষা: প্রেষণা ব্যক্তিকে শারীরিক ও মানসিক সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- পরিবেশের সাথে মিথস্ক্রিয়া: ব্যক্তি পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে প্রেরণা পায়।
- উদ্দেশ্যমুখী আচরণ: লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যক্তি সচেষ্ট হয়।
- কর্মোদ্যম বৃদ্ধি: প্রেষণা কর্মস্পৃহা বাড়ায় এবং উৎপাদনশীলতা উন্নত করে।
Read More: